পর্তুগালে বেতন কত? ২০২৫ সালে মাসিক আয় ও জীবনযাত্রার খরচের বিস্তারিত জানুন

পর্তুগাল ইউরোপের একটি জনপ্রিয় দেশ যেখানে অনেক বাংলাদেশি পড়াশোনা, চাকরি বা স্থায়ীভাবে বসবাসের স্বপ্ন দেখেন। তবে যাওয়ার আগে প্রায় সবার মনেই একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়—পর্তুগালে বেতন কত? জীবনযাত্রার খরচ কেমন? এই আর্টিকেলে আমরা ২০২৫ সালের আপডেট তথ্যসহ বিস্তারিত আলোচনা করব, যা আপনার ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় সহায়ক হবে।

পর্তুগালে কোন কাজের বেতন বেশি?

২০২৫ সালে পর্তুগালে সর্বনিম্ন মাসিক বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে €৮৭০। তবে পর্তুগালে বছরে ১৪ মাস বেতন দেওয়া হয় (১২ মাসের বেতন + ছুটি ও উৎসব ভাতা)। ফলে বার্ষিক বেতন দাঁড়ায় €১২,১৮০, যা মাসিক গড়ে €১,০১৫

পর্তুগালে কাজের বেতন পেশা ও দক্ষতার ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। কিছু পেশার ক্ষেত্রে বেতন অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি, বিশেষ করে যেগুলোতে বিশেষায়িত দক্ষতা বা উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন হয়। নিচে কিছু জনপ্রিয় পেশার মাসিক গড় বেতন দেওয়া হলো, যা আপনাকে ধারণা দিতে সাহায্য করবে কোন কাজে বেশি বেতন পাওয়া যায়:

  • সফটওয়্যার ডেভেলপার: প্রায় €২,০০০ থেকে শুরু হতে পারে, অভিজ্ঞতা ও কোম্পানির উপর নির্ভর করে আরও বাড়তে পারে।
  • ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী: মাসিক বেতন €১,৮০০ থেকে €২,৫০০ পর্যন্ত হতে পারে, বিশেষ বিশেষায়িত ক্ষেত্রে আরো বেশি।
  • ইঞ্জিনিয়ার: গড়ে €১,৫০০ থেকে €২,০০০।
  • ব্যবস্থাপক ও অফিস প্রধান: সাধারণত €১,২০০ থেকে €২,০০০।
  • শিক্ষক: প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে মাসিক বেতন €১,২০০ থেকে শুরু, উচ্চশিক্ষায় কম বেশি পরিবর্তন হতে পারে।
  • নির্মাণ শ্রমিক ও পরিষেবা কর্মী: সাধারণত €৬০০ থেকে €১,২০০, অভিজ্ঞতা ও কাজের ধরণ অনুযায়ী।

সাধারণত প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা, এবং ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে বেতন অন্য ক্ষেত্রের তুলনায় বেশি হয়। সেই সঙ্গে অভিজ্ঞতা ও ভাষার দক্ষতাও বেতনে বড় প্রভাব ফেলে।

পর্তুগালে যদি উচ্চ বেতনের চাকরি চান, তবে পর্তুগিজ ভাষা শিখে দক্ষতা বাড়ানো এবং পেশাগত প্রশিক্ষণ নেওয়া জরুরি।

পর্তুগালে বাংলাদেশি কর্মীদের চাকরির ধরন ও বেতন কেমন?

পর্তুগালে বর্তমানে অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন। তারা মূলত নির্মাণ শ্রমিক, রেস্টুরেন্ট সহকারী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও কৃষিকাজে যুক্ত। এসব খাতে মাসিক বেতন সাধারণত €৬০০ থেকে €১,০০০ পর্যন্ত হয়ে থাকে।

তবে অভিজ্ঞতা, ভাষাজ্ঞান (বিশেষ করে পর্তুগিজ ভাষা), ও কাজের ধরন অনুযায়ী বেতন আরও বেশি হতে পারে। নির্মাণ খাতে অভিজ্ঞ একজন শ্রমিক প্রায় €১,২০০ পর্যন্ত পেতে পারেন।

অনেক সময় অতিরিক্ত ঘন্টা কাজ (overtime) করলে অতিরিক্ত আয় সম্ভব। রেস্টুরেন্টে কাজ করলে খাবার ও থাকার সুযোগও কিছু প্রতিষ্ঠান দিয়ে থাকে, যা খরচ কমাতে সাহায্য করে।

বর্তমানে পর্তুগালের অভিবাসন নীতিতে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে, যা বাংলাদেশিদের জন্য চাকরির সুযোগ আরও সহজ করে তুলেছে।

পর্তুগালে বসবাসের জন্য কত টাকা প্রয়োজন?

পর্তুগালে আরামদায়কভাবে বসবাস করতে মাসিক খরচ আপনার জীবনযাত্রার ধরন, বাসস্থানের অবস্থান এবং ব্যক্তিগত চাহিদার উপর নির্ভর করে। সাধারণত, একজন একক ব্যক্তি বা দম্পতির জন্য মাসিক খরচের একটি আনুমানিক বিবরণ নিচে দেওয়া হলো:

  • বাসা ভাড়া: লিসবনে সিটি সেন্টারে এক বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া প্রায় €১,০০০–€১,৯০০। পোর্তোতে এই ভাড়া €৮০০–€১,৫০০ এবং ব্রাগা বা কোইম্ব্রাতে €৬০০–€৮০০।
  • খাবার ও মুদি খরচ: মাসিক মুদি খরচ প্রায় €৩৫০–€৪০০। রেস্টুরেন্টে এক বেলার খাবার €৯–€১৪ এবং দুই জনের জন্য ডিনার €৪৫–€৫৫।
  • পরিবহন: মাসিক পাবলিক ট্রান্সপোর্ট পাসের খরচ €৪০–€৫০।
  • ইউটিলিটি ও ইন্টারনেট: বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসের মাসিক খরচ €১০০–€১৫০ এবং ইন্টারনেটের জন্য €৩০–€৪০।

এই খরচগুলো বিবেচনা করে, একজন একক ব্যক্তির জন্য মাসিক মোট খরচ প্রায় €১,৫০০–€২,০০০ হতে পারে।

 পর্তুগাল বনাম বাংলাদেশ: বেতন ও জীবনযাত্রার খরচের তুলনা

যারা পর্তুগালে কাজ বা স্থায়ী বসবাসের কথা ভাবছেন, তাদের জন্য বাংলাদেশ ও পর্তুগালের মাসিক আয় ও খরচের একটি তুলনামূলক চিত্র নিচে তুলে ধরা হলো:

🏷️ বিষয় পর্তুগাল (মাসিক) বাংলাদেশ (মাসিক)
💰 গড় বেতন €১,২০০ (~৳১,৪৪,০০০) ৳৩০,০০০–৳৪০,০০০
🏠 বাসা ভাড়া (১ বেড) €৯০০–€১,৬০০ (~৳১,০৮,০০০–৳১,৯২,০০০) ৳১২,০০০–৳৩০,০০০
🍛 খাবার খরচ €৩৫০–€৪৫০ (~৳৪২,০০০–৳৫৪,০০০) ৳৮,০০০–৳১৫,০০০
🚌 পরিবহন খরচ €৪০–€৬০ (~৳৪,৮০০–৳৭,২০০) ৳২,০০০–৳৫,০০০
📶 ইউটিলিটি ও ইন্টারনেট €১৩০–€১৮০ (~৳১৫,৬০০–৳২১,৬০০) ৳৩,০০০–৳৫,০০০

নোট: ১ ইউরো ≈ ১২০ টাকা (২০২৫ সালের আনুমানিক রেট অনুযায়ী)
📌 পর্তুগালের খরচ অঞ্চলভেদে ভিন্ন হতে পারে — লিসবন ও পোর্তোর মতো বড় শহরে খরচ তুলনামূলক বেশি।

আরও পড়ুন: পর্তুগালে কোন কাজের বেতন বেশি

উপসংহার

পর্তুগালে বেতন তুলনামূলকভাবে ইউরোপের অন্যান্য দেশের চেয়ে কম হলেও, জীবনযাত্রার খরচও কম। ফলে একটি সুষম জীবনযাপন সম্ভব। তবে বড় শহরগুলিতে বাসা ভাড়া ও অন্যান্য খরচ বেশি হতে পারে, তাই পরিকল্পনা করে এগোনো উচিত।

আপনি যদি ভবিষ্যতে পর্তুগালে কাজ বা পড়াশোনার কথা ভাবেন, তাহলে এই তথ্যগুলো আপনার প্রস্তুতিকে আরও সহজ করে তুলবে।

Leave a Comment